২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) জীবনের শেষ ক্রিকেট ম্যাচটি মিরপুরেই খেলেছিলেন মোশাররফ হোসেন রুবেল। মস্তিষ্কে টিউমারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ বিরতিতে যাওয়া রুবেলের ব্যাট-বল নিয়ে আর ফেরা হলো না মিরপুরে। মঙ্গলবার শেষ বারের মতো আসলেন, তবে এবার ব্যাট বল নিয়ে নয়, এলো তার নিথর দেহ। যে মাঠে দুই যুগের বেশি সময় ব্যাট-বল নিয়ে সময় কাটিয়েছেন তিনি। এই মাঠেই শোকে কাতর মাশরাফি-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা তাকে শেষ বিদায় জানালেন।
ক্রিকেট পাড়া মঙ্গলবার সকাল থেকেই থমথমে। সাবেক ক্রিকেটার সামিউর রহমান সামিকে হারানোর শোক না কাটতেই বিকেলে এলো মোশাররফ হোসেনের মৃত্যু সংবাদ।
রুবেলকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হোম অব ক্রিকেটে অনুষ্ঠিত হয়েছে জানাজা। এতে মাশরাফি, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, এনামুল হক, আল আমিন, শরিফুল, ইমরুল কায়েস, নুরুল হাসান সোহান, ফরহাদ রেজা, কামরুল ইসলাম রাব্বিসহ সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটারদের বেশিরভাগই উপস্থিত ছিলেন। সাবেক ক্রিকেটারদের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক, হাবিবুল বাশার থেকে শুরু করে তুষার ইমরান, আতহার আলী, ফারুক আহমেদ, খালেদ মাহমুদ সুজন, আকরাম খান, নাঈমুর রহমানদের দেখা যায়।
বোর্ড সভাপতি উপস্থিত না থাকলেও বেশিরভাগ বোর্ড পরিচালকদের দেখা গেছে জানাজায়। এসেছিলেন জালাল ইউনুস, ইফতেখার মিঠু, তানভীর আহমেদ টিটু, ঈসমাইল হায়দার মল্লিক। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দীন চৌধুরীও তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ছিলেন স্থানীয় কোচ সোহেল ইসলাম, মিজানুর রহমান বাবুলসহ বেশ কয়েকজন।
জানাজা শেষ হতেই সাইরেন বাজিয়ে মোশাররফ রুবেলকে বহনকরা অ্যাম্বুলেন্সটি তার প্রিয় সবুজ গালিচায় মাড়িয়ে চলে যায়। গন্তব্য বনানী কবরস্থান, সেখানেই তাকে দাফন করা হয়েছে। মিরপুরের প্রিয় চত্ত্বরে আর কোনও দিনই ফেরা হবে না রুবেলের। নুরুল হাসান সোহানতো বলেই দিলেন, ‘এত চেষ্টা, এত কিছু বিফলে গেলো। রুবেল ভাই আর আমাদের মাঝে ফিরলেন না।’
সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান স্মৃতিচারণ করে শুধু বললেন, ‘একটা ভালো মানুষের যেসব গুণ থাকা দরকার রুবেলের সব ছিল। শৃঙ্খল জীবন। ভালো ক্রিকেট খেলতো। ভালো মানুষ। শিক্ষিত ছেলে। ভালো পরিবারের ছেলে। উদাহরণ দেওয়ার মতো একজন মানুষকে আজ আমরা হারালাম।’
দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে মঙ্গলবার হার মেনেছেন রুবেল। ৪০ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে গেলেন বাঁহাতি স্পিনার। তার মস্তিষ্কে বাসা বেঁধেছিল টিউমার। চিকিৎসা নিয়েছেন দেশ ও দেশের বাইরে- ভারত ও সিঙ্গাপুরে। শুরুতে কিছুটা উন্নতি হলেও ধীরে ধীরে অবনতি হয়। গত বছরের শেষ দিকে শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকলে আবারও ভারতে চিকিৎসা করাতে যান। কিন্তু ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ফেরার পর থেকে অবনতি ঘটে তার।
গত কিছুদিন ধরে একদমই খেতে পারছিলেন না। ফলে শরীর ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়ে। অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়ায় ১৪ মার্চ হাসপাতালে নেওয়া হয়। স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর সাধারণ কেবিনে স্থানান্তর করা হয় তাকে। এরপর অবস্থা কিছুটা ভালো হওয়ার পর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় একসময় রুবেলকে। কিন্তু সব কিছু ফেলে আজ বিকাল পাঁচটায় ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ক্রিকেটার রুবেল।